ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

এখনো ৫ জানুয়ারির নির্বাচন তাড়া করছে সরকারকে

euro-debate-news-_Bk_OKসর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিতর্ক সরকারের পিছু যেন ছাড়ছেই না! ঘরে-বাইরে নানা রকম সমালোচনা চলছে এখনো। পাশাপাশি রয়েছে বিদেশীদের চাপ।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট বাংলাদেশ-বিষয়ক বিতর্কে সরকারের তীব্র সমালোচনা হয়েছে। আলোচনায় সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গ।

ওই আলোচনায় বিএনপিকে জামায়াতের মতো দলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কারণে সমালোচনা করা হয়েছে। বিতর্কিত এ দলটির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের আলোচনায় বাংলাদেশের ওপর ‘অবরোধ আরোপের’ প্রশ্ন পর্যন্ত উঠেছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন এর আগে বিদেশি কোনো প্লাটফর্ম থেকে এমনভাবে বাংলাদেশের সমালোচনা করা হয়নি।

গত ৭ জুন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বিতর্কে ‘বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথ থেকে সরে যাচ্ছে’ উল্লেখ করে রোমানিয়ার চবা শগর সরকারপ্রধানের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনের আগে বিরোধী দল বিএনপিকে ধ্বংস করার সংকল্প করেছেন বলে মনে হচ্ছে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট (নেদারল্যান্ডস) বাট কনডারস তার বক্তৃতায় ২০১৪ সালের নির্বাচনকে ‘বিরোধীদলহীন’ এবং ‘বিতর্কিত’ অভিহিত করে বলেন, সেই নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিক, মানবাধিকার ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি দুর্ভাগ্যজনকভাবে ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে ‘এক নতুন সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন’ বলে মনে করেন বাট কনডারস।

উল্লেখ্য, গত দুই বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের ব্যাপারে যেসব প্রস্তাব গ্রহণ করেছে তার মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ২০১৪ সালের নির্বাচন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞ ও সাবেক মন্ত্রী মীজানুর রহমান শেলীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিদেশিদের উদ্বেগ নতুন কিছু নয়। তবে, এবার সমালোচনার মাত্রাটা বেশি। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার সেটা কতটুকু আমলে নিচ্ছে। ৫ জানুয়ারি কেমন নির্বাচন হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ যেমন জানেন, বিদেশিরাও জানেন।

সাবেক এ ছাত্রনেতা আরও বলেন, দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এসব বিষয়ে বিদেশিদের উদ্বেগে আমরা পরিস্থিতি অনুভব করি। নিজেরা সমাধানের উদ্যোগ নিই না। এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে সামনের দিনে অবস্থার আরও অবনতি হবে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট বিতর্কে রোমানিয়ার ক্রিস্টিয়ান দান প্রেদা বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুতর রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির মুখোমুখি। সরকারের সমালোচনায় কড়া মন্তব্য করেছেন ইংল্যান্ডের নিনা গিল। তার মন্তব্যে বলেন, নাজুক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা সুরক্ষার পরিবর্তে তারা (সরকার) এই বর্বর হত্যাকাণ্ডগুলোকে নির্বাচনী স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে ব্যবহার করার পথ বেছে নিয়েছে।

বাংলাদেশকে তলিয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন ক্রিস্টিয়ান প্রেদা। এমন উদ্যোগে বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারতকে সঙ্গে নেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ড. এ এস এম আলী আশরাফ দ্য রিপোর্টকে এসব বিষয়ে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো পার্লামেন্টে যেভাবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অবস্থান নিয়ে সমালোচনা হয়েছে তা সরকারের জন্য নিঃসন্দেহে স্বস্তির বিষয় নয়।

অন্য একটি দেশের বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর এ ফোরাম এভাবে আলোচনা করতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আলী আশরাফের মত―বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশে এই জোটের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ ও সহযোগিতা আছে। বাংলাদেশেরও প্রধান রপ্তানি বাজারের অন্যতম ইউরোপ। তাই তাদের দেশের নাগরিকে স্বার্থ যেখানে আছে সেই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিতর্কে নেদারল্যান্ডসের মারিকি শাকা বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে তথাকথিত বন্ধুকযুদ্ধে নিহতদের বিষয়ে বলেন, সন্দেহভাজনদের সরাসরি মেরে ফেলা ভালো সমাধান নয়।

ইংল্যান্ডের অপর সদস্য জিন লামবার্ট গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিকদের গ্রেফতারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

অস্ট্রিয়ার ইয়োজফ ভাইডেনহোলৎসার গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ভীষণ খারাপ বলে অভিহিত করেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার টেবিলে বসার উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে জার্মানির টমাস মান বলেন, পরিস্থিতি এতটাই রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে যে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

নির্বাচনে সহিংসতার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে ইংল্যান্ডের আমজাদ বশির বলেন, নির্বাচনে দৃশ্যমান কারসাজির কারণে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছে। যা সহিংসতার ইন্ধন জুগিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।

বিভিন্ন দেশের সদস্যদের আলোচনার বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাট কনডারস বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ওপর অবরোধ আরোপের পক্ষপাতী আমি নই। আলোচ্য ইস্যুগুলোতে সহযোগিতামূলক রাজনৈতিক সংলাপই সমাধানের পথ হতে পারে।

মন্তব্য জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিতর্কে আওয়ামী লীগের অস্বস্তির কিছু নেই। বরং তারাই বলেছে বিএনপি যেন জামায়াত ছাড়ে। আমরাও অনেক আগে থেকে বলে আসছি, যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত দলটির সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করলে আওয়ামী লীগ (বিএনপির সঙ্গে) সংলাপের কথা ভাববে।

 

পাঠকের মতামত: